প্রগতিশীল ও উন্নত রাষ্ট্র বলতে মানসলোকে যে ধারণা পুস্পপত্রে পল্লবিত হয়ে ওঠে ওয়েস্ট শেয়ালপুর রিপাবলিক ঠিক তাই। ফলে শিয়ালপুরের রাজধানীর নাম চিকেনডাঙা শোনার পর বিস্ময় জাগেনি। এই রাজধানীতেই প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘বিশ্ব মুরগিসুন্দরী প্রতিযোগিতা’।
বিশ্ব সুন্দরী প্রতিযোগিতার কথা শুনলেও বিশ্বমুরগি সুন্দরী প্রতিযোগিতার বিষয়ে পুরোই অজ্ঞ ছিলাম। শেয়ালডাঙার সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী স্যার মোরগালিয়াম কুককুরুক যখন এ তথ্য জানালেন তখন বিস্ময় গোপন করতে পারিনি। অগাধ কৌতূহল নিয়ে তার কাছে জানতে চাইলাম-
: স্যার, এ প্রতিযোগিতা আয়োজনের কারণ কি?
: চিকেনিজম ভাবান্দোলনের ফসল এই প্রতিযোগিতা। মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বব্যাপী মুরগিবাদীদের চলমান সংগ্রামের প্রতি সংহতি জানাতে শেয়ালপুর রাষ্ট্রীয়ভাবে এ প্রতিযোগিতা আয়োজন করে।
নিজ অজ্ঞানতাকে মনে মনে ধিক্কার জানিয়ে প্রশ্ন করলাম-
: এ প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন কি কি পুরষ্কার পান?
শেয়ালপুর রিপাবলিকের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী বেশকিছুক্ষণ ভাবলেন, তারপর বললেন-
: যে প্রতিযোগী চ্যাম্পিয়ন হন তিনি অনেক পুরষ্কারইই পান। মুরগিধিকার আন্দোলনের ব্রাণ্ড এম্বাসেডর হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। তবে সবথেকে বড় পুরষ্কার হলো মুরগি স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠায় তারা আমৃত্যু শেয়ালদের সাহচর্য পান।
আবার বিস্মিত হবার পালা, সারাজীবন জেনে এসেছি শেয়াল আর মুরগীর সম্পর্ক খাদক ও খাদ্যের, আর মন্ত্রী মশাই বলছেন সাহচার্যের কথা! কৌতূহল চাপতে না পেরে বললাম-
: মন্ত্রী মশাই, শেয়ালদের সাহচর্য বিষয়ে যদি একটু খোলাসা করে বলতেন-
: ভেরী সিম্পল। চ্যাম্পিয়নসহ ফার্স্ট ও সেকেন্ড রানার্স আপ বিশ্ব মুরগিসুন্দরী শেয়ালদের সাথে রাত কাটিয়ে জানিয়ে দেন- মুরগিস্বাধীনতা হরণ করা যাবেনা।
যত জানছি ততই কৌতূহল বাড়ছে, জানতে চাইলাম-
: এতে শেয়ালদের লাভ কি?
মন্ত্রীমশাই ক্ষুব্ধ কণ্ঠে জানালেন-
: সবকিছুতেই লাভ থাকতে হবে! শেয়ালদের মনে মুরগিদের প্রতি দরদ ও ভালোবাসা নেই- এ ধারণা সম্পূর্ণ অবান্তর। শেয়ালদের মত এতো বেশী করে কে আর মুরগিদের ভালোবাসে!
মন্ত্রী মশায়ের কাছে ক্ষমা চাইলাম। কিন্তু তার রাগ কমেছে বলে মনে হোলো না। কিছুটা ভয় নিয়েই প্রশ্ন করলাম-
: বাকী প্রতিযোগিরা কি সুযোগ পান?
মন্ত্রীমশাই ঝাঁঝালো স্বরে বললেন-
: আপনার কি মনে হয়?
বিনয়ের সাথে উত্তর দিলাম-
: স্যার, আমার কোনো ধারণা নেই। তাই আপনার কাছে প্রকৃত তথ্যটা জানতে চাইছি-
স্যার মোরগালিয়াম ক্ষোভে ফেটে পড়লেন-
: শেয়ালপুর রিপাবলিকের মোরগরা কি মরে গেছে! বাকী প্রতিযোগীরা এই মোরগদের সাহচর্য পায়। তারপরেও দু:খজনক সত্য হোলো মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় মোরগদের ভূমিকা সবসময়েই ফোকাসের বাইরে থেকে গেছে। মুরগী আগে না ডিম আগে প্রশ্ন থেকেই এই অবহেলার শুরু, যেনো ডিমোৎপাদনে মোরগের কোনো ভূমিকা নেই।
আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস হলো না। মন্ত্রী মশায়ের কাছ থেকে বিদায় নেয়ার সময় তিনি কানে কানে বললেন- ‘মুরগির প্রয়োজন হলে বলবেন, সংকোচ করবেন না। মুরগিধিকার প্রতিষ্ঠায় চিকেনিজম বিশেষজ্ঞ ৩৪-২৬- ইনফিনিটি মুরগি পাঠিয়ে দেবো, জাস্ট রুম নাম্বারটা জানাবেন।’
.
#খসড়া অণুগল্প
১৩১০২০১৮
loading...
loading...
অসাধারণ অণুলিখন প্রিয় লিখক মি. আবু সাঈদ আহমেদ।
loading...